বাংলা চলচ্চিত্রের সামাজিক অ্যাকশন ধারার পাঁচ পরিচালকের গল্প ও ৪ দশকের ছবিগুলো

পরিচালক দেওয়ান নজরুল ঃ বাংলা চলচ্চিত্রে সামাজিক অ্যাকশন ছবির এক অন্যরকম রুপকার পরিচালক দেওয়ান নজরুল । ‘রংবাজ’ ছবিতে পরিচালক জহিরুল হক বাংলাদেশের দর্শকদের অ্যাকশন এর সাথে সর্বপ্রথম পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সেই ‘অ্যাকশন ‘ ধারাকে প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় করেছেন এই দেওয়ান নজরুল। নজরুল এর ছবি মানেই অন্যরকম অ্যাকশন গল্পে ঠাসা চরম নাটকীয় উত্তেজনায় থাকা দর্শকদের আড়াই ঘণ্টা।সেই ‘দোস্ত দুশমন’ নামক চরম একটি সিনেমা দিয়ে শুরু এরপর একে একে নজরুল তৈরি করেন ‘বারুদ’ ‘আসামী হাজির’, ‘ওস্তাদ সাগরেদ’, ‘ জনি’, ‘ধর্ম আমার মা’ ‘কুরবানী’ ‘মাস্তান রাজা’ ‘কালিয়া’ ‘বাংলার নায়ক’ এর মতো সব বক্স অফিস কাঁপানো দুর্দান্ত ছবি । দেওয়ান নজরুল না থাকলে জসিম দুর্দান্ত ভিলেন থেকে গনমানুষের নায়ক হতে পারতেন কিনা জানিনা। এই দেওয়ান নজরুল এর হাত ধরেই বাংলা চলচ্চিত্রের ৭০এর শেষ দিকে জসিম নামক এক দুর্দান্ত ভিলেনের আগমন । যাকে প্রথম দেখায় ভারতের বিখ্যাত অভিনেতা আমজাদ খান প্রশংসা করেছিলেন। ‘দোস্ত দুশমন ‘ ছবির সেই ভয়ঙ্কর ডাকু থেকে ‘বারুদ’ এর গদফাদার যিনি আজিম কে তৈরি করেন অপরাধ জগতের এক ক্ষমতাধর রাজারুপে, ‘জনি ‘ ছবির ফেরারি ডাকাত দলের সরদার, ‘ওস্তাদ সাগরেদ ‘ ছবির ভয়ংকর কালুগুন্ডা থেকে হয়ে যান ‘মাস্তান রাজা’ আবার কখনও বেবি ট্যাক্সি ড্রাইভার কালু থেকে হয়ে যান ‘কালিয়া’ যিনি অপরাধ জগতের কিং, আবা
র সেই অপরাধ জগতের কিং হয়ে যান বস্তিবাসী মানুষের ‘বাংলার নায়ক ‘ । সবই দেওয়ান নজরুল এর এক একটি অমর সৃষ্টি । যারা দেখেছিলেন তাঁরা আজো সেই চরিত্রগুলো ভুলতে পারেননি। ‘বারুদ’ ছবিটি ছিল সেই সময়ে বিখ্যাত ও কালজয়ী হলিউড মুভি ‘গডফাদার’ এর বাংলা ভার্শন। যাকে গডফাদার ছবিটিকে বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে চমতকারভাবে উপস্থাপন বলা যায়। বাংলা অ্যাকশনধর্মী ছবির মাঝে ‘বারুদ’ চিরকাল একটা ক্লাসিক হিসেবে ঠাই করে নিয়েছে। দেওয়ান নজরুল ছবির শুরুতেই স্বীকার করেছিলেন ‘ একটি বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে তৈরি’ ।যে ছবিতে ছিল সেই সময়ের পর্দা কাঁপানো আজিম, সোহেল রানা, ওয়াসিম ও জসিম। যারা সকলেই অপরাধ জগতের বাসিন্দা। পিতা আজিম এর সহযোগী সোহেল রানা ঠিক পিতার মতোই ঝানু অপরাধী , ছোট ভাই ওয়াসিম বিদেশে পড়ালিখা করে দেশে এসেছে । পিতা আজিম চায়না ওয়াসিম অপরাধ জগতে জড়িয়ে পরুক। তাঁর একমাত্র ভরসা বড় ছেলে সোহেল রানা যিনি পিতার সাথে ছায়ার মতো থাকে। শুরু হয়ে যায় জসিম ও আজিম এর বিচ্ছেদ ও অপরাধ জগতের লড়াই। যেখানে পিতা আজিম এর পক্ষে সোহেল রানা আর বিরুদ্ধে জসিম ও তাঁর বাহিনী। এইরকম টানটান উত্তেজনায় নির্মিত ছিল ‘বারুদ’।দেওয়ান নজরুল কোনদিন দর্শকদের নিরাশ করেনি। তাঁর সিনেমা মানেই উপচে পড়া ভিড় আর আড়াই ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা। ছবিতে বিনোদনের কোন কমতি ছিলনা, দর্শকদের পয়সা ১৬ আনা উসুল করে দেয়াই ছিল দেওয়ান নজরুল এর লক্ষ্য। বাংলা চলচ্চিত্র যতদিন থাকবে ততদিন বাংলা চলচ্চিত্রে অ্যাকশন ছবির পিতা হিসেবে পরিচালক দেওয়ান নজরুল এর নামটি স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।

পরিচালক এ জে মিন্টু ঃ ১৯৭৮ সালে শুরুতে ‘মিন্টু আমার নাম ‘ ছবি দিয়ে পরিচালনায় আসেন পরিচালক এ জে মিন্টু। এ জে মিন্টু শুধু একজন গুণী পরিচালকই ছিলেন না তিনি ছিলেন একধারে কাহিনিকার, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচয়িতা এবং একজন সফল প্রযোজকও ছিলেন। মিন্টুর প্রযোজনা সংস্থা ‘সানফ্লাওয়ার মুভিজ’ একধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত ছবির একটি সফল প্রযোজনা সংস্থা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তদের তালিকায় এ জে মিন্টুর ছিল একটি অতি পরিচিত নাম । মিন্টুর ছবি মানেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জন্য মনোনীত হওয়া ছবি। মিন্টুর ছবি মানে হলে দর্শকদের ভিড়। এই পরিচালক এতো বেশি যত্ন নিয়ে ছবি তৈরি করতেন যে প্রতিটা দৃশ্য বাস্তবের সাথে মিল থাকতো। তাই মিন্টুর ছবি বছরে ১/২ টি পাওয়া যেতো। যেটি বানাতেন তা খুব যত্ন নিয়ে বানাতেন যার কারনে বাংলা চলচ্চিত্রে মিন্টুকে ‘মাস্টার মেকার’ উপাধি দেয়া হতো। প্রতিজ্ঞা, বাঁধনহারা প্রতিহিংসা ,চ্যালেঞ্জ, মান সম্মান , অশান্তি , লালু মাস্তান , সত্য মিথ্যা , ন্যায় অন্যায় , পিতা মাতা সন্তান , বাংলার বধূ, প্রথম প্রেম , বাপের টাকা কোন ছবিটা দর্শকের ভালো লাগে নাই কেউ বলতে পারবে না। আর তাই অশান্তি – বাপের টাকা পর্যন্ত প্রতিটি ছবি কোন না কোন শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিল। একধিক শাখায় পুরস্কার প্রাপ্ত ছবিগুলো হলো লালু মাস্তান, সত্য মিথ্যা, ন্যায় অন্যায়, পিতা মাতা সন্তান, বাংলার বধূ , প্রথম প্রেম ও বাপের টাকা। মিন্টুর ছবি দেখে দর্শকরা কখনও নিরাশ হয়নি। পুরোটা সময় হলভর্তি মানুষ চরম উত্তেজনা নিয়ে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত অপেক্ষা করতো । মিন্টুর ছবির কারনে চিত্রনায়ক আলমগীর একাধিকবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন। মিন্টু শুধু বাংলা বাণিজ্যিক ধারার অসাধারন সব ছবি দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেননি , তৈরি করেছেন একাধিক গুণী ও মেধাবী পরিচালক যারা আজো বাংলা চলচ্চিত্রে কাজ করে যাচ্ছেন। মিন্টুর মেধাবী ছাত্রদের মধ্য অন্যতম হলেন – সোহানুর রহমান সোহান (বেনাম বাদশা, কেয়ামত থেকে কেয়ামত (সালমান শাহ ও মৌসুমি) ,স্বজন, আমার ঘর আমার বেহেস্ত (শাকিল খান ও পপির প্রথম ছবি) আখেরি রাস্তা, বিদ্রোহী কন্যা, অগ্নিসাক্ষী, অনন্ত ভালোবাসা (শাকিব এর প্রথম ছবি), স্পীড ইত্যাদি), মনোয়ার খোকন (জ্যোতি , সংসারের সুখ দুঃখ, ঘাত প্রতিঘাত, স্বামী কেন আসামী, সত্য মিথ্যার লড়াই, সত্যর বিজয় ইত্যাদি), শাহ আলম কিরন ( প্রতিশোধের আগুন, বিচার হবে, আসামী বধূ , শেষ ঠিকানা ইত্যাদি) যারা গুরু মিন্টুর মতো বাংলা বাণিজ্যিক ছবিকে করেছে সমৃদ্ধ। ‘অশান্তি’ ছবির মাধ্যমে জননন্দিত অভিনেত্রী শাবানাকে অ্যাকশন লেডী হিসেবে প্রথম সামনে আনেন তিনি। ৮০র দশক থেকে ৯০ দশক পর্যন্ত বাংলা চলচ্চিত্রে এ জে মিন্টু আলাদা একটি অধ্যায় হয়ে ইতিহাসে ঠাই করে নিয়েছেন। তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে আরেক সফল ও জনপ্রিয় পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকন বলেছিলেন ” আমাদের সমসামিয়ক পরিচালকদের মাঝ থেকে আমাকে যদি সেরা ৩ পরিচালকের নাম বলতে হয় তাহলে আমি ১ নম্বর নামটি রাখবো এ জে মিন্টু ভাইয়ের নাম। এই একজন পরিচালকের ছবি দেখলে মনে হয় যে সিনেমার কোন কল্পিত গল্পের দৃশ্য দেখছি না।সব দৃশ্যকে তিনি বাস্তবের সাথে মিল রেখে করার চেষ্টা করেন। এমন একজন পরিচালক বাংলা চলচ্চিত্র থেকে সরে যাওয়া কত যে দুর্ভাগ্যজনক তা বলে বুঝানো যাবে না”। মিন্টুর মালিকানাধীন ‘খতীব খামার বাড়ী’ বাংলা চলচ্চিত্র ও নাটকের শুটিং স্পট হিসেবে আজো একটি জনপ্রিয় শুটিং স্পষ্ট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সবশেষে পরিচালক খোকনের কথার মতো বলতে হয় জীবিত অবস্থায় এমন একজন মেধাবী, সফল ও জনপ্রিয় পরিচালক এর বাংলা চলচ্চিত্র থেকে সরে দাঁড়ানো এই শিল্পের জন্য খুব দুর্ভাগ্যজনক ও দুঃখজনক।।
পরিচালক শিবলি সাদিক ঃ
শিবলি সাদিক নামটা বাংলা চলচ্চিত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের কাছে বহুবার শোনা ও জানা। ৮০র দশকের শুরুর দিকে ‘নোলক ‘ নামক একটি ক্লাসিক ছবি দিয়ে যার ছবি পরিচালনা শুরু আর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পরিচালনার সমাপ্তি হয়েছিল। এই পরিচালক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোন যুগেই চলচ্চিত্র শিল্পকে ছেড়ে যাননি। যত দুঃসময় আসুক শিবলি ছিলেন নিয়মিত। বাংলা চলচ্চিত্রের শিল্পী, প্রযোজক, পরিবেশক, প্রদর্শক ও দর্শক সব শ্রেণীর কাছে শিবলি ছিলেন একটি আস্থার নাম। একটি ভরসার নাম। ভরসা হবেই না কেন? যিনি নোলক, নীতিবান , ভেজা চোখ, অর্জন , অচেনা,বন্ধন, মা মাটি দেশ , মাটির কসম, ত্যাগ , অনুতপ্ত , অন্তরে অন্তরে , অনন্দ অশ্রু , মায়ের অধিকার এর মতো সব ব্যবসাসফল ছবির পরিচালক ছিলেন তার উপর আস্থা রাখাটাই স্বাভাবিক। একেবারে আনকোরা ,অপরিচিত শিল্পী থেকে শুরু করে যুগের সুপারস্টারদের নিয়ে ছবি পরিচালনা করে সফল হয়েছিলেন শিবলি। বাংলা চলচ্চিত্রের সুপারস্টার তিন বোন সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা কে একসঙ্গে এক ছবিতে তিনিই প্রথম ও শেষবারের মতো দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করে চমকে দিয়েছিলেন। ৮০ র দশকে যেখানে ন
নায়ক প্রধান আকশন ছবিগুলোর জয় জয়কার ও প্রাধান্য ছিল সেখানে শিবলি একমাত্র পরিচালক যিনি নারীপ্রধান ছবি দিয়ে বক্সঅফিসে তোলপাড় করেছিলেন। সেই থেকে বাংলা চলচ্চিত্রে নারী প্রধান অ্যাকশনধর্মী ছবি বানানোর সাহস পরবর্তীতে অনেকেই করেছিলেন। কিন্তু শিবলি ছিলেন সবার প্রথম। উপমহাদেশের বিখ্যাত শিল্পী কুমার শানুর চলচ্চিত্রের প্রথম প্লে ব্যাক গান ছিল শিবলির ‘তিনকন্যা ‘ ছবির টাইটেল গানটি যা আজো দর্শকদের কানে বাজে। শিবলির ছবির আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিল গীতিকার মনিরুজ্জামান মনির এর লিখা ও আলম খানের সুর করা অসাধারন সব গান যা বাংলা চলচ্চিত্রের কালজয়ী গানের তালিকাকে দীর্ঘ করেনি শুধু সমৃদ্ধও করেছিল। তার পরিচালিত প্রথম ছায়াছবির গানগুলো ছিল ভাওয়াইয়া গান প্রধান ছবি। ‘ ও কি ও কাজল ভ্রমরারে ‘ , ও মোর বানিয়া বন্ধুরে এর মতো সব অসাধারন গান আর নান্দনিক চিত্রায়ন ছবিটিকে দিয়েছে একটা ক্লাসিক বাংলা ছায়াছবির মর্যাদা। যৌতুক না দেয়ার কারনে একটি গ্রাম্যবধুর মৃত্যু নিয়ে যৌতুকপ্রথার বিরুদ্ধে ‘নোলক’ হলো বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম প্রতিবাদ এর ছবি। একজন পরিচালক কতটা সাহসী, মেধাবী ও সৃষ্টিশীল মানসিকতার হলে এমন ঝুকি নেয়ার সাহস করতে পারে তা যারা ‘নোলক’ ছবিটি দেখেছেন তাঁরা বুঝতে পারবেন। ক্লাসিক, সামাজিক অ্যাকশন, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, দেশপ্রেম, রোমান্টিক অ্যাকশন সহ সব ধারার গল্পের ছবি নিয়ে শিবলি সফল হয়েছিলেন যা বাংলা চলচ্চিত্রের পরিচালকদের মধ্য বিরল। শিবলির মতো এতো বৈচিত্র্যময় পরিচালক বাংলা চলচ্চিত্রে আর একজনও নেই। তাকে কখনও কোন বিশেষ একটি ধারার পরিচালক এর কাতারে ফেলা যেতো না। আজ শিবলি নেই কিন্তু তিনি বেঁচে থাকবেন বাংলা চলচ্চিত্রে যুগ যুগ ধরে……………অনন্তকাল ।।


পরিচালক শহিদুল ইসলাম খোকন ঃ বাংলা বাণিজ্যিক ধারার ছবির মধ্য ‘অ্যাকশন’ ধারার মাঝে ‘কংফু অ্যাকশন’ কে জনপ্রিয় করার পেছনে যে মানুষটির সবচেয়ে বেশি অবদান তিনি হলেন শহিদুল ইসলাম খোকন । খোকন হলেন গত ৩ দশক ধরে বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিচালকদের অন্যতম একজন। খোকন এর ছবি মানেই নতুন কিছু, ব্যতিক্রম কিছু , বুদ্ধিদীপ্ত কিছু আর জমজমাট কংফু অ্যাকশন বা মার্শাল আর্ট। এর বিভিন্ন কলা কৌশলের চমৎকার প্রদর্শন । জনপ্রিয় নায়ক রুবেল এর আবিস্কারক এই খোকন। শুধু রুবেল নয় মার্শাল আর্ট কে জনপ্রিয় করতে তিনি মার্শাল আর্ট জানা অভিনেতা ড্যানি সিডাক, সিরাজ পান্না, ইলিয়াস কোবরা, চায়না, কবির খাঁ ও অভিনেত্রী মিশেলার আবিস্কারক । এরা সবাই ছিলেন খোকনের ছবির নিয়মিত শিল্পী যার ফলে মার্শাল আর্ট যে একটি শুধু আত্নরক্ষার কৌশলই নয় একটি শিল্পও বটে সেটা বাংলা ছবির মাধ্যমে খোকন চমৎকার ভাবে তুলে ধরেন। খোকনের ছবির কাহিনী সবসময় একটু আধুনিক থাকতো। দর্শক কে একই জিনিস বারবার তিনি দেখাতেন না। তাই সেই সময় আমরা সবাই অপেক্ষায় থাকতাম খোকনের ছবি কবে মুক্তি পাবে? খোকনের ছবি মানেই হিট আর উপচে পড়া দর্শকের ভিড়। খোকনের ছবি দেখেই সেই সময় কিশোর তরুণদের মাঝে মার্শাল আর্ট শেখার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল। খোকনের ছবির অ্যাকশন দৃশ্য গুলো ছিল দুর্দান্ত , দারুন । ৮০র দশকের মাঝামাঝি থেকে ৯০ দশকের পুরোটাই ছিল খোকন এর নিত্যনতুন ছবির বাজার। খোকন ছিলেন টপ লিস্টেড ব্যস্ত পরিচালকদের একজন।টেলিভিশন এর জনপ্রিয় অভিনেতা প্রয়াত হুমায়ূন ফরিদি কে পুরোপুরি বাণিজ্যিক ধারার ছবিতে খল চরিত্রে নিয়ে আসেন এই খোকন যার ফলে বাংলা চলচ্চিত্র পায় ফরিদির মতো একজন অসাধারন অভিনেতার অভিনয় সমৃদ্ধ শখানেক ছবি। সেই ৮৫ তে ‘লড়াকু’ ছবি তে তিনি যে কাহিনী তুলে ধরেছেন আজ ২৭ বছর পরেও এমন কাহিনী নিয়ে কেউ কাজ করতে পারেনা। ‘লড়াকু ‘ দিয়ে খোকন -রুবেল – আলম খান ত্রয়ীর সম্পর্ক শুরু এরপর একে একে মুক্তি পায় ‘বীরপুরুষ , ‘বজ্রমুসঠী , ‘বিপ্লব’ ‘ উত্থান পতন’ ‘সন্ত্রাস ‘ ‘ টপ রংবাজ ‘ ‘শত্রু ভয়ংকর ‘ ‘অপহরণ’ ‘সতর্ক শয়তান ‘ ‘দুঃসাহস’ ‘বিশ্বপ্রেমিক ঘাতক ‘ ‘ ‘কমান্ডার’ ‘রাক্ষস ‘ ‘লম্পট’ ‘পালাবি কোথায়’ ‘নরপিশাচ’ ‘ভণ্ড ‘ ‘ম্যাডাম ফুলি’ ‘পাগলাঘণ্টা ‘ ‘ভেজা বিড়াল ‘ র মতো সব দুর্দান্ত ও ব্যবসা সফল ছবি । কমান্ডার , ম্যাডাম ফুলি, ভেজা বিড়াল ছাড়া সবগুলো ছবিতে ছিল রুবেল। উপরের উল্লেখিত ছবিগুলোর মধ্য ‘পালাবি কোথায়’ ছবিটি ছাড়া আর একটি ছবি ফ্লপ হয়েছে বলে কারো জানা নেই। বীরপুরুষ, বিপ্লব, টপ রংবাজ, সতর্ক শয়তান, অপহরণ, বিশ্বপ্রেমিক, ঘাতক, কমান্ডার, ভণ্ড ছবিগুলো ছিল বছরের সেরা ১০ টি ব্যবসাসফল ছবির তালিকায়। খোকন না থাকলে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের একটি অপূর্ণতা রয়ে যেতো চিরকাল যা তাঁর সব ছবি না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না । বাংলা চলচ্চিত্রের মধ্য খোকন নিজেই একটা স্বতন্ত্র ধারা , একটি আলাদা অধ্যায় হয়ে চিরকালের জন্য বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঠাই করে নিয়েছেন ।

কাজী হায়াত – বাংলাদেশের মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির যারা ভক্ত তাদের কাছে খুব পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি নাম কাজী হায়াৎ । কারন , বাংলাদেশের মুলধারার বাণিজ্যিক ছবির মধ্য যিনি সবচেয়ে বেশি আমাদের রাজনীতি ,সমাজনীতি ,অর্থনীতি’র অবক্ষয় গুলো তুলে ধরে সরাসরি প্রতিবাদ করেছেন । তাঁর ছবি মানেই ভিন্ন কিছু, রক্তে আগুন লাগা কিছু । কাজী হায়াৎ মানেই ‘অসৎ রাজনীতি’ ও ‘ভণ্ড দেশপ্রেমের’ বিরুদ্ধে গর্জে উঠে পুরো ছবিতে তুলোধনা করা একজন পরিচালক । বাংলাদেশের মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতে কাজী হায়াৎ এর মতো এতো বেশি সমাজের অবক্ষয় ও জনদুর্ভোগ নিয়ে আর কোন পরিচালক সরাসরি চপটাঘাত করেনি ।
গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা ফাকরা ইউনিয়নের তারাইল গ্রামে ১৯৪৭ ১৫ ই ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক। তিনি ১৯৭৪ সালে পরিচালক মমতাজ আলীর সাথে ‘রক্তাক্ত বাংলা’ ছবিতে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এবং ১৯৭৬-১৯৭৭ মৌসুমে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের সাথে ‘সীমানা পেরিয়েচ’ ছবিতেও সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৭৯ সালে ‘দি ফাদার’ ছবিটি পরিচালনার মধ্যে দিয়ে পূর্ণ-পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। উনি ছাত্রজীবন থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি এতো বেশি আগ্রহী ছিলেন যে ১৯৭৪ সালেই মাস্টার্স পরিক্ষার পরপর ফলাফল প্রকাশের আগেই চলচ্চিত্রে মমতাজ আলী’র সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন । ‘দি ফাদার’ এর মতো শিল্পমান সম্মত মূলধারার বাহিরের ছবি দিয়ে পরিচালনা শুরু করলেও ২য় ছবি ‘খোকন সোনা’ দিয়ে তিনি পরিপূর্ণ বাণিজ্যিক ছবি তৈরি করা শুরু করেন । কারন ‘দি ফাদার’ ছবিটি ঢাকা শহরে শিক্ষিত শ্রেণীর কাছে প্রশংশা পেলে ও দেখলেও গ্রামাঞ্চল সহ মফসলশহর গুলোতে ছবিটি চলেনি ফলে প্রযোজক ব্যবসায়িক ভাবে খতিগ্রস্থ হোন। ব্যবসায়িক ভাবে লাভবান না হওয়ায় প্রযোজক কাজী হায়াৎ কে পরবর্তীতে তাঁর অফিসে প্রবেশ করতে দেয়নি । এই ঘটনার পরেই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে ছবি বানালে ব্যবসায়িক লাভের জন্যই বানাবেন এবং সেই বাণিজ্যিক ছবিতেই তিনি তাঁর বক্তব্য তুলে ধরবেন ।

কাজী হায়াৎ এর ছবির মূল বৈশিষ্ট্য হলো তিনি তৃণমূল থেকে সমাজের প্রতিটি শ্রেণীর জনদুর্ভোগ, রাজনৈতিক নীতিহীনতা ও এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো নিয়ে তাঁর ছবিতে তুলে ধরেন । ১৯৯১ সালে ‘দাঙ্গা’ ছবিটি সারাদেশে আলোচিত হয়েছিল কারন তিনি অতি সাহসীকতার সাথে একজন সংসদ সদস্য থেকে কিভাবে নিজের ক্ষমতার শক্তি দিয়ে একের পর এক অন্যায় করে মন্ত্রী পর্যন্ত হয়ে উঠেন তাঁর চিত্র । এরপর পরেই ‘ত্রাস’ ছবিতে তিনি আমাদের মেধাবী ছাত্রদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কিভাবে ছাত্র রাজনীতির দোহাই দিয়ে অন্ধকার পথে ব্যবহার করছেন তাঁর করুন চিত্র।

‘দাঙ্গা’ ছবির কারনে প্রয়াত জনপ্রিয় দুর্দান্ত অভিনেতা রাজীব সর্বপ্রথম ‘খলচরিত্রের কারনে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন এবং ২য় বার কাজী হায়াত এর ‘চাঁদাবাজ’ ছবির খল চরিত্রের কারনে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন । ‘চাঁদাবাজ’ ছবিটি ছিল রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিভাবে ‘চাঁদাবাজ’রা একটি মধ্যবিত্তে স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিনত করেন এবং সমাজে এদের প্রশ্রয়দাতা কারা সেই চিত্রটি। একই ভাবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একজন মেধাবী পরিচালকের রাজনৈতিক কারনে জীবনে তছনছ হয়ে যায় সেতা ফুটিয়ে তুলেন ‘দেশপ্রেমিক’ ছবিতে যা ছিল অসাধারন একটি ছবি ।

কাজী হায়াৎ পরিচালিত কালজয়ী চলচ্চিত্র যেমন, ‘দি ফাদার’ – (১৯৭৯), খোকন সোনা, রাজবাড়ী, বেরহম, দায়ী কে, যন্ত্রণা, দাঙ্গা, ত্রাস, দেশ প্রমিক, সিপাহী, চাঁদাবাজ, দেশদ্রোহী, তেজি, আম্মাজান, কাবুওয়ালা ও ইতিহাস এর মধ্যে অন্যতম।
এ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশটি ছবি পরিচালনা করেছেন তিনি।
পরিচালিত চলচ্চিত্রসমূহ
• দি ফাদার – (১৯৭৯)
• দিলদার আলী
• খোকন সোনা
• রাজবাড়ী
• মনা পাগলা
• পাগলী
• বেরহম
• আইন আদালত
• দায়ী কে
• যন্ত্রণা
• দাঙ্গা
• ত্রাস
• আদাছরী (শিশুতোষ চলচ্চিত্র)
• দেশ প্রমিক
• সিপাহী
• পাগলা বাবুল
• লাভ স্টোরী
• চাঁদাবাজ
• দেশদ্রোহী
• তেজি
• জবর দখল
• লুটতরাজ
• আম্মাজান
• ধাওয়া
• ধর
• ঝড়
• পাঞ্জা
• আব্বাজান
• সমাজকে বদলে দাও
• তাণ্ডবলীলা
• স্বপ্ন
• কাবুলিওয়ালা
• মিনিস্টার
• কষ্ট
• বর্তমান
• ক্রোধ
• ইতিহাস
• অন্ধকার
• অন্যমানুষ
• ক্যাপ্টেইন মারুফ
• শ্রমিক নেতা
• ওরা আমাকে ভালো হতে দিল না
• পিতা পুত্রের গল্প
• মানিক রতন দুই ভাই
সম্মাননা
কাজী হায়াৎ তাঁর চলচ্চিত্র জীবনে আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও অনন্যা চলচ্চিত্র পুরস্কার সহ সর্বমোট ৭৩টি চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মধ্যে চারটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে অংশগ্রহণ করে দাঙ্গা চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে একটি পুরস্কার লাভ করেন। এবং মোট আটটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সবে অংশগ্রহণ
কার্লোবিভেরী আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব’ চেকোস্লোভাকিয়া ‘১৯৮৮
• চলচ্চিত্র দায়ী কে: The Last Kick
মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব ‘রাশিয়া’ ১৯৮৯
• চলচ্চিত্র যন্ত্রণা
পিয়ান ইয়ান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব উত্তর কোরিয়া ১৯৯১
• চলচ্চিত্র দাঙ্গা
তেহরান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব ইরান ১৯৯২
• চলচ্চিত্র দাঙ্গা ও চাঁদাবাজ
আন্তর্জাতিক সম্মাননা
পিয়ান ইয়ান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উত্সব উত্তর কোরিয়া ১৯৯১। আফ্রো-এশিয়ো সরিডরি কমিটি এ্যাওয়ার্ড কর্তৃক প্রদেয় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার।
• বিজয়ী শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র দাঙ্গা ১৯৯১
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘দায়ী কে’ ছবির শ্রেষ্ঠ সংলাপ এর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন ১৯৮৮ সালে এছাড়া ‘ত্রাস’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ সংলাপ ও চিত্রনাট্যকার এর পুরস্কার লাভ করেন । ১৯৯৩ সালে ‘চাঁদাবাজ’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য ও কাহিনীকার , ১৯৯৪ সালে ‘দেশপ্রেমিক’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার এবং ‘ইতিহাস’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন ।

এবার সবাইকে গত চার দশকের মুলধারার বাণিজ্যিক ছবির কিছু লিঙ্ক দিলাম  ছবিগুলো দেখার জন্য – ৬০ – ৭০ দশক ঃ

 

টাকা আনা পাই , আনোয়ারা , অবাঞ্ছিত বধূ বিদায়,জীবন থেকে নেয়া সারেং বউ , তিতাস একটি নদীর নাম,লাঠিয়াল চকোরী, ১৩ নং ফেকু অস্তাগার লেন , সিমানা পেরিয়ে , নবাব সিরাজুদ্দোলা পুনর্মিলন, ওরা ১১ জন, জীবন সঙ্গীত , তালাশ অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, বাবুল, আসিয়া, কাচের দেয়াল, কাচ কাঁটা হিরে, হারানো সুর, , সূর্যকন্যা, আসিয়া, সুতরাং , মনিহার , আবার তোরা মানুষ হো, ক খ গ ঘ ঙ , কলমিলতা, রুপবান , সাত ভাই চম্পা, আলোর মিছিল পিচ ঢালা পথ, অনন্ত প্রেম, মাসুদরানা , দস্যু বনহুর, সূর্য দীঘল বাড়ী , গুনাহগার, এপার ওপার, এক মুঠো ভাত, আপন পর, দোস্ত দুশমন , নয়নমণি, ধীরে বহে মেঘনা , অবুঝ মন ,কথা দিলাম মানুষের মন, আবির্ভাব,তালাশ, বেহুলা , বাঁশরি, স্বরলিপি, দেবদাস


৮০- ৯০ দশক – নোলক, জীবন নৌকা, নাগ পূর্ণিমা, বারুদ, আখিমিলন, বসুন্ধরা, বড় ভালো লোক ছিল, দা রেইন, দা ফাদার, সাক্ষী , রজনিগন্ধা খোকনসোনা ,দায়ী কে , বাধনহারা, চ্যালেঞ্জ,ঘুড্ডি, বাল্যশিক্ষা ,ছুটির ঘণ্টা , পুরস্কার , নয়নের আলো, তিনকন্যা , দহন , বারুদ, জনি, ওস্তাদ সাগরেদ, নিতিবান, দূরদেশ, পাগলী, তওবা, লড়াকু , ফুলশয্যা, অপেক্ষা, আগমন, হুশিয়ার, স্বর্গ নরক, প্রতিরোধ, ক্ষমা, বিসর্জন, ব্যথার দান, চাঁপা ডাঙ্গার বউ, স্বাক্ষর , রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত বিরোধ , অশান্তি, ঝিনুকমালা, সবুজ সাথী, দুই পয়সার আলতা ,গোলাপি এখন ট্রেনে, ভাত দে , সুন্দরী, কসাই, মহানায়ক, মান অভিমান, পালকি, ভেজা চোখ, দেশ বিদেশ, হালচাল , লাভ ইন সিঙ্গাপুর, মিস্লংকা, সাজানো বাগান, ঢাকা ৮৬ , পেনশন, নানটু ঘোটক, প্রহরী, সহধর্মিণী , অভিযান ,ঘেরাও , রামের সুমতি , ভাই বন্ধু , জিনের বাদশা , উসিলা, আদেশ, অবুঝ হৃদয় , স্বামীর আদেশ , স্ত্রীর স্বপ্ন সম্মান, দুই জীবন ,যোগাযোগ, বিপ্লব, বজ্রমুসঠী সত্য মিথ্যা, সারেন্ডার , , ঘর ভাঙ্গা ঘর,গরীবের বউ, সন্ধি , সন্ধান, বিজয়, স্বামী -স্ত্রী, বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না ,ন্যায় অন্যায়, সান্তনা, রাঙ্গা ভাবী ,অন্ধ বিশ্বাস বাংলার বধূ, লক্ষির সংসার, অর্জন , জন্মদাতা পিতা মাতা সন্তান , টাকার অহংকার, বন্ধু আমার, গরীবের বন্ধু পদ্মা মেঘনা যমুনা, দাঙ্গা,মা মাটি দেশ , সন্ত্রাস চোরের বউ, সিপাহী, অচেনা,ত্যাগ , আজকের হাঙ্গামা , আমার আদালত , বাবার আদেশ , টপ রংবাজ ,প্রেমের প্রতিদান, দেশদ্রোহী , কেয়ামত থেকে কেয়ামত , অন্তরে অন্তরে , শাসন আগুনের পরশমণি প্রথম প্রেম,সন্ত্রাস, অপহরণ, সতর্ক শয়তান , দেনমোহর ,লাভস্টোরি, বেয়াদব , দোলা , ঘরের শত্রু , বিশ্বপ্রেমিক , বাংলার নায়ক , অজান্তে , কমান্ডার , সংসারের সুখ দুঃখ, বাপের টাকা, ঘৃণা, ঘাতক , ঘাত প্রতিঘাত, ভণ্ড , বিক্ষোভ, তুমি আমার , লজ্জা , গৃহযুদ্ধ ,এই ঘর এই সংসার , দুর্জয় , চাওয়া থেকে পাওয়া স্নেহ , সত্যর মৃত্যু নেই , আত্মঅহংকার, অগ্নিসাক্ষী , অধিকার চাই , লুটতরাজ , লাল বাদশা , মা যখন বিচারক , ভালোবাসি তোমাকে , কে অপরাধী , খবর আছে , মনে পড়ে তোমাকে
আরও বিশেষকিছু পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন – একটি শিক্ষিত রেডিও
* যেসব ছবির কোন লিঙ্ক পাইনি শেগুলোর গানের লিঙ্ক দিয়ে ছবিটি সম্পর্কে একটু ধারনা দেয়ার চেষ্টা করেছি।।
উপরের উল্লেখিত সবগুলো ছবি যদি দেখতে পারেন তাহলে বাংলা চলচিত্রের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ছবির ধারার পরিবর্তনটা আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন অর্থাৎ কিভাবে আমাদের চলচ্চিত্র শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত এসেছে এবং কিভাবে ছবির গল্প, মেকিং,অভিনয়, পরিচালনা ,গান সবকিছুতে পরিবর্তন হয়ে আজকের অবস্থায় পৌঁছেছে তাঁর পুরো স্পষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের সমস্যা কোথায় ছিল, আমাদের ছবির মান কেমন ছিল, কোন দশকে কোন ধারার ছবিগুলো শুরু হয় সেই সব উত্তরগুলো আপনি নিজেই পেয়ে যাবেন। আমরা না জেনে ,না বুঝে বাংলা চলচ্চিত্রকে আজ অবজ্ঞা করছি, অবহেলা করছি, রুচিহীন বলছি যা কোনভাবেই একজন বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে উচিত নয়। আমরা সমালোচনা করতে পারি কিন্তু আমার দেশের শিল্পকে কোনভাবেই ঘৃণা করতে পারিনা। মনে রাখবেন ‘ঘৃণা করা তাঁরই সাজে ভালোবাসে যে’।। আগে ভালবাসতে শিখুন তারপর ঘৃণা করুন। ঘৃণা, কড়া সমালোচনা আর বড় বড় কথা বলার আগে একবার নিজের মনকেই প্রশ্ন করুন যে আপনি বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার জন্য , প্রসার এর জন্য কোনদিন কিছু করেছেন কি? যদি না করে থাকেন তাহলে সেটাকে নিয়ে কড়া সমালোচনা করে নিজেকে স্মার্টও আধুনিক মানুষ হিসেবে প্রমান করার এক ব্যর্থ চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন। আপনি শহরে, আধুনিক ,শিক্ষিত হলে কি গ্রামে বাসকরা আপনার অশিক্ষিত, গেঁয়ো,অসুন্দর চেহারার মাকে কি আপনি কোনদিন সন্তান হয়ে ঘৃণা করতে পারবেন? ‘বাংলা’ / ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি যতকিছুর আগে বসে বুঝতে হবে সেটা আমার মায়েরই পরিচয় , মায়েরই সম্পদ। কারন ‘বাংলা’ যে আমার মা।।

লেখক – ফজলে এলাহী (পাপ্পু)

কবি ও কাব্য

 

5 thoughts on “বাংলা চলচ্চিত্রের সামাজিক অ্যাকশন ধারার পাঁচ পরিচালকের গল্প ও ৪ দশকের ছবিগুলো

  1. অসাধারন পাপ্পু ভাই বাংলা সিনেমা সম্র্পকে এই রকম তথ্যবহুল পোষ্ট অনেক দিন পর পেলাম । সেই সব স্বর্ন য়ুগের মধ্যে পুরোপুরি ডুকে পরেছিলাম আর ভাবছিলাম আমরা কি মিস করছি যেটা আপনার পেয়েছেন ।

যাদব সূত্রধর এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল